মহেঞ্জোদারো দেখলাম। লিখতে বসার পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। নামটা শোনার সাথে সাথে শিক্ষিত মানুষ মাত্রেই বুঝতে পারবে চলচিত্রটা কী নির্ভর। তাই এই মুভিটা দেখার জন্য কিছুটা শিক্ষীত হতেই হবে। প্রেক্ষাপট ৪,৫০০ বছর আগেকার। ইন্ডিয়ান পরিচালক ও কাহিনীকাররা জানেন, জনগন ইতিহাস জানতে চলচিত্র দেখে না, দেখে নেহাত বিনোদণের জন্য সেটা যেমনই হোক। সব শ্রেনীর দর্শক-শ্রোতাদের কথা মাথায় রেখেই বেশিরভাগ পরিচালক ছবি বানায়। প্রায় ৫০০০ হাজার বছর আগে মানুষ কী পোশাক পরত, কেমন ছিল তাদের জীবনযাত্রা, তাদের সমাজ ও জীবন ভাবনা তথা প্রেম-ন্যয়-অন্যায় বোধ কেমন ছিল, এই সবকিছুর কৌতুহল মেটাবার জন্য ছবিটি দেখার আহবাণ পরিচালকের। তীব্র কৌতুহলী হয়ে দেখতে বসেছিলাম তাই ছবিটি, কিন্তু মাঝপথেই হতাশ হয়ে গেলাম।
কৌতুহলের প্রথম পর্বঃ বর্তমান পাকিস্তানের লারাকানায় অবস্থিত ৪৫০০ বছরের পুরানো সভ্যতা ও শহর ছিল মহেঞ্জোদারো। সিন্ধু নদ তীরবর্তী এই সভ্যতা ছিল তখনকার দিনে সমৃদ্ধ। ৬টি শহর নিয়ে গড়ে ওঠা এই সভ্যতার লোকেরা বাধ নির্মাণ ও কৃষি কাজ জানত। ব্যবসাও জানত। তবে বাধই কাল হল তাদের। ইতিহাস বলে অপরিকল্পিত বাধ নির্মানের কারণে প্রলয়ংকরী বন্যায় ডুবে ধবংস হয়ে যায় এই সভ্যতা যা এই চলচিত্রটির প্রধাণ প্রেক্ষাপট।
মজার তথ্য হল, সিন্ধু তীরবর্তী লোকেরা ছিল প্রাচীন ইন্দো-ইয়োরোপীয় ভাষাভাষি, ইরাণ থেকে আগত এবং এদেরকে বলা হত আর্য, এদের ধর্ম গ্রন্থ ছিল বেদ। এরা শুরুতে মূর্তিপূজারী ছিল না, ছিল নিরাকারবাদী ও যজ্ঞবাদী, মানে যজ্ঞ করে যে (স্তব-স্তুতির সাথে আগুনে আহুতি দেবার এক ধরণের প্রার্থণা পদ্ধতি) পরবর্তীতে অন্যান্য সমাজের লোকেদের সাথে মিশে তাদের সামাজিক উপাদানগুলো ওউন করতে শুরু করে এবং নিজের ধর্ম ও দর্শন বিনিময়ের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হতে থাকে এবং স্থায়ীভাবে প্রাচ্যধারায় মিশে যেতে থাকে।এবং এরা এই নদীটিকে বলত ‘হিন্দু’। তারা ‘স’ উচ্চারণ করতে পারত না, এর পরিবর্তে বলত ‘হ’। সেই থেকে সিন্ধু তীরবর্তী লোকেরা হিন্দু নামেই পরিচিত হয়ে ওঠে।