কিছুটা ব্যাবসায়ী মনোভাবাপন্ন (Business Oriented) হবার পরে অনুভব করতে পেরেছি ব্যাবসা হল একটি দেশের জীবনী শক্তি (Life line)। একটি দেশকে যদি মানুষ হিসেবে কল্পনা করা হয় ব্যাবসা হচ্ছে তার রক্ত। রক্তের মান খারাপ হলে শরীর মন ও মানসম্পন্ন হয় না। আমাদের দেশে সর্বক্ষেত্রে ব্যাবসা করে মানহীন এবং অযোগ্য লোকজন। আগে বাঙালির মুখে শোনা যেত, ভদ্র পরিবারের লোকজন নাকি ব্যাবসা করে না। যাহোক, এই মানহীন লোকের জন্যই যেকোন পণ্যেরই মান কম হয়। বিশ্বমানের পণ্য বা সেবার সংখ্যা বাংলাদেশে কম। গার্মেন্টস এবং অন্যান্য রপ্তানী পণ্যসহ আর লাখো রকম পণ্য নিয়ে রপ্তানীমুখী ও ব্যাবসায়ীকভাবে সফল প্রতিষ্ঠান গড়া যেত, যদি এ ক্ষেত্রে শিক্ষিত মানুষের আনাগোনা অনেক বেশি হত। কিন্তু আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী এবং আদর্শে অনেক ঘাটতি আছে। আমাদের দেশে ব্যাবসা করে তারাই যারা প্রথমত অশিক্ষিত, দ্বিতীয়ত যাদের কোন বিষয়ে বিশেষায়িত জ্ঞান নেই, তৃতীয়ত যারা আসলে কোন কাজ পায় না বা পারে না বা কোন কিছু করার যোগ্যতা নেই, তারাই শেষ চেষ্টা হিসেবে ব্যাবসায় নামে। যার ফলে নেতৃত্ব চলে যায় এই সব মানহীন অযোগ্য লোকের কাছে। কেননা, বাইডিফল্ট একজন সফল ব্যাবসায়ী একজন সমাজপতি বা নেতা। তাই বলি কী, যারা সাহসী, নতুন কিছু করতে চান, ছাপোষা জীবন নিয়ে অতিষ্ঠ, মানুষকে ভাল কিছু দিতে চান এবং পেতে চান, দয়া করে মাথাটা নিয়ে ব্যাবসায়ে ঢুকুন। সর্বোপরি Quality Survives and Succeeds. দেশের খারাপ দিক নিয়ে চিল্লাচিল্লি করলে আর টোঙের দোকানে ভীড় করে চায়ের কাপে ঝড় তুলে বিড়ি টানলেই দেশোদ্ধার করা যায় না।
তাই একজন শিক্ষিত, সৃজনশীল, নেতৃত্ব গুনসম্পন্ন, সাহসী এবং সেই সাথে সেবার মনোভাবাসম্পন্ন কোন মানুষের প্রথম পছন্দ হওয়া উচিত ব্যাবসা। যেসকল শিক্ষিত মানুষ অনেক সৃজনশীল, মিশুক, নির্লোভ তাদের যেতে হবে শিক্ষকতায় আর যারা কোনকিছুর জন্য ঝুঁকি নিতে একদমই রাজি নয় তাদেরকে চাকরীই করতে হবে। আর আমাদের দেশে এই সংখ্যক মানুষের সংখ্যাই দূর্ভাগ্যক্রমে বেশি। তবে শিক্ষার একটা গুণ আছে। আর তা হল মান এবং মানবিক পরিবেশ বজায় রাখা। দেখবেন যে আমাদের এনজিও সেক্টরে শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি বলে সেখানে মানের সাথে মানবিক পরিবেশও বিরাজ করে। কোন কোন এনজিও বিশ্বমানেরও বটে। তবে সেখানে উদ্যোক্তা তৈরি হয় না। তাই সমাজের মানহীনতার যে সর্বগ্রাসী চেহারা তা নিরাময় হয় না। অতএব, আসুন নতুন করে ভাবি। নিজের জন্য। দশের জন্য।