শুনেছি আমার পিতামহের গ্রামে বিদ্যুৎ এসেছে। সত্যি বলতে আমি খুশি হই নি। বাংলাদেশের উন্নয়ন মানে আমার কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক। যে বিজন গাঁয়ে কাকের ডাকে ভোরের ঘুম ভাঙতো, যেখানে ঘুঘু্র ডাকে নিঝুম দুপুরের নীরবতা ভাঙ্গত, যেখানে সমবেত কীর্তনে কিংবা চাষীর ঘরে ফেরায় সন্ধ্যা মুখরিত হয় সেই বিজন গাঁয়ে এখন বিদ্যুৎ চলে এসেছে। আমার ঘরের পাশের শৈশবের ডুবাডুবি আর নৌকা বাওয়া খালে এখন বিদ্যুৎ এসেছে। আমার দুরন্ত শৈশবের দৌড়াদৌড়ি করা সরু পথখানি এখন পিস রাস্তা হয়ে যাচ্ছে। সবাই দেখছে উন্নয়ন। আর আমি দেখছি প্রায় ৩০০ মাইল দূরে থেকেও, আমার দৌড়ানো সেই পথের দুপাশের কিশোর গাছের ডালের পাতারা ইঁটের ধূলায় লাল আর প্রাণহীন হয়ে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে। মোটরগাড়ির ঘরঘর শব্দে হতচকিত আর বিরক্ত বকেরা ধানক্ষেত আর বিল ছেড়ে চলে গেছে বহুদূরে। বিলের ধারের নৌকাটি অলস পড়ে থেকে শ্যাওলা ধরে গিয়েছে। ঘরে ঘরে বাজছে হিন্দী গান আর স্টার জলসা। দুপুরের নিরবতার বুক চিড়ে উড়ে গিয়েছে ধান শালিক আর ঘুঘু পাখি। সকালের কাকের ডাক, দুপুরের ঘুঘু-ডাকা নীরবতা , সন্ধ্যার কীর্তন সবকিছু মুছে গিয়ে উন্নয়ন হচ্ছে। এ যেন হূমায়ূন আজাদের সেই কবিতার লাইনের মত, “বাংলার নিসর্গকে হত্যা করে উন্নয়ন হবে”।
“বাংলার নিসর্গকে হত্যা করে উন্নয়ন হবে”
ফেসবুকের মাধ্যমে মন্তব্য করুন: